কূটনৈতিক সম্পর্ক্য


রিফাত ঘরে ঢুকে দেখে নীতি, ওর বউ, টিভিতে মশগুল। ভারতীয় চ্যানেলের মাদকাশক্তির মত বউ শ্বাশুড়ীর সিরিয়াল। এখন সেটা থেকে তাকে বা তার থেকে সেটাকে সরানো অসম্ভব ব্যাপার।  এই সিরিয়ালটা দিনে তিন বার দেখানো হয় এবং তিনবারই নীতি ওটা দেখবে। রিফাত একদিন কারন জানতে চেয়েছিল। নীতি বুঝিয়ে বলে, প্রথমবার ওদের পোশাক-আশাক আর গল্পটা দেখি, দ্বিতীয়বার  ভাষাটা বাংলা করে বুঝি আর শেষবার ক্যাচালটা বুঝি। নীতি আরো বলে, আমি ইকনোমিক্সে এমএ পাস। এখন ভাবি পলিটিকাল সাইন্স নিয়ে পড়লে  ভালো হতো।
রিফাত আজ অফিস ফাকি দিলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচটা ঘরে বসে হাতপা ছড়িয়ে চা আর চিপ্স খেতে খেতে দেখবে বলে। এখন বুঝলো, সে গুড়ে বালি। গুড়ে বালি পড়লে সে বালি বেছে আলাদাও করা সম্ভব হয় না আর গুড়ও খাওয়া হয়ে ওঠে না।
সেই অসাধ্য সাধনের উদ্দেশ্য নিয়ে রিফাত বললো, আমাকে এককাপ চা বানিয়ে দাও না সোনা।
-দাড়াও, ব্রেকটা হোক বানিয়ে দেবো।

ওদিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই টসটা হয়ে যাবে। একবার ভাবলো অফিসে চলে গেলেই ভালো হতো। অফিসেও আজ সবাই ঘটা করে ওয়ানডে ম্যাচই দেখবে। ওখানে হলের কমনরুমে বসে টিভি দেখবার মতই; ঘরে বসে নিজের টিভি দেখবার মজাই আলাদা। সোফায়ে পা তুলে বসো, টি টেবিলে পা তুলে দাও, যেমন খুশী দেখ। এখন মনে হচ্ছে ঘরে জনে জনে টিভি থাকা ভালো। সেটাই বিজ্ঞান সম্মত ব্যবস্থা। রিফাতের আরো মনে হলো যে এই টিভি বিনোদন বা কালচার আসবে বলেই যৌথ পরিবার গুলো সব ভেঙ্গে ভেঙ্গে আজ ওয়ান-বেড ওয়ান-ডাইনিং এটাচ-বাথ পরিবার গুলোর তৈরি।
রিফাত কন্ঠে খানিক বিরক্তি ঢেলেই বলে, এক গ্লাস পানি দাও।
সব স্ত্রীরাই তাদের স্বামীকে দমিত করে রাখতেই ভালবাসে। বিশেষ করে লোকজন বা আত্মিয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সামনে। তবে সচ্চরিত্র এবং ভালো পয়সা কামানো স্বামীদের বউরা কিন্তু লোকচক্ষুর আড়ালে স্বামীর বিগড়ানো মেজাজকে বেশ স্বস্মানে ভয়ই পায়। নীতি ওঠে গেল পানি আননে এবং চট জলদি নিয়েও আসলো।
রিফাত গ্লাসটা নিতে গিয়ে লক্ষ্য করলো নীতির চোখ টিভিতেই আটকানো। রিফাত মুহূর্তখানেক সময়ের মধ্যে বুঝে নিল এটাই পালা বদলানোর সুযোগ। গ্লাসটা ধরবার অজুহাতে তা ফেলে দিল। 

Comments