Posts

Showing posts with the label Short Story

সিংহদ্বার

মনোয়ারাকে সেলিম ভালবাসে, তবে কেন ভালবাসে তা গুছিয়ে বলতে পারে না। অর্থাৎ, সত্যি সত্যিই ভালবাসে। কিন্তু একথা বলা যায় না। ওদের সংসারে মা মরা মেয়ে মনোয়ারার যা অবস্থান, তিন চাচীর ঘরে ফ্রি সার্ভিস দিতে দিতে এ সব কথা শোনবার মত মনের অবস্থা ওর আর থাকে না। মেয়ে-বাপে কোন মতে পৈত্রিক বাড়িটাতে জীবন বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাছ্ড়া পাড়ায়ে সেলিমের যেমন রাগি রাগি ভাবমূর্তী তাতে তার এই পয়ত্রিশ বছর বয়সের সিরিয়াস প্রেমের এক-পক্ষিয় বেদনার কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। মনেয়ারার অসহায় বাপাও সেলিমের সাথে কিছুটা দূরত্ব বজিয়ে রেখে চলতে চায়। ট্রাকের পেছনে যেমন লেখা থাকে ‘১০০ হাত দূরত্ব বজায় রাখুন’ তবে চলাচলের পথে সে নিয়ম মেনে চলা যায় না। ওর বৃদ্ধ বাপ এই বৈশাখে চৈত্রের দাবদহ রোদে পুড়ে ঘামে ভিজে এক হাতে বাজারের তিন চারটে ব্যাগ আর অন্য হাতে পাতাসহ বিশাল একটা মানকচু বয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। সেলিম তখন পটকার চায়ের দোকানে ছায়ার নিচে বেঞ্চে বসে মোবাইলে চার্জ দিয়ে নিচ্ছিল; যদি কেউ বলে চা-বিড়ি ওড়াচ্ছিল মাগনা মাগনা, তাহলে ভুল হবে। তবু দূর থেকে সবাই পটকার চায়ের দোকানে ওকে দেখে সে কথাই ভাবে। বৃদ্ধলোকটাও তেমন কথাই ভাবছিল। এর

যুগবদল

ছোট ছোট শহরগুলোতে সেদিনও যৌথ পরিবার কিছু ছিল। নিজেদের যৌথ পরিবারের তেতলা বাড়ীর তিন তলার পিছ-বারান্দায়ে দাড়িঁয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে বশির দেখলো ওর অবসরপ্রাপ্ত বড়চাচা দু’হাতে দুটো বাজারের ব্যাগ টানতে টানতে বাড়ীর দিকেই আসছে। আজ ছেয়াত্তর বছর বয়সে সে কথা আবারো বশিরের মনে পড়লো। ঢাকার বেইলি রোডের আঠারো তলা একটা বিল্ডিংয়ের চোদ্দ তলার বড় ছেলের ভাড়াটে ফ্ল্যাটে বসে বসে বাইরের আকাশটা দিকে তাকিয়ে, দৃশ্যটা তার মনে পড়লো। বশির জানে, আর একটু পরেই, নাভেদ অফিসে বেরিয়ে যাবার পর পরই ওর বউ এসে বলবে, বাবা একটু হাঁটতে হাঁটতে বাজারে যাবেন?

বিক্রয় বিজ্ঞপ্তি

বিক্রয়  করা হবে,  শিশুর অব্যবহৃত জুতা । “For sale: Baby shoes. Never worn.” Hemingway  

কূটনৈতিক সম্পর্ক্য

Image
রিফাত ঘরে ঢুকে দেখে নীতি, ওর বউ, টিভিতে মশগুল। ভারতীয় চ্যানেলের মাদকাশক্তির মত বউ শ্বাশুড়ীর সিরিয়াল। এখন সেটা থেকে তাকে বা তার থেকে সেটাকে সরানো অসম্ভব ব্যাপার।  এই সিরিয়ালটা দিনে তিন বার দেখানো হয় এবং তিনবারই নীতি ওটা দেখবে। রিফাত একদিন কারন জানতে চেয়েছিল। নীতি বুঝিয়ে বলে, প্রথমবার ওদের পোশাক-আশাক আর গল্পটা দেখি, দ্বিতীয়বার  ভাষাটা বাংলা করে বুঝি আর শেষবার ক্যাচালটা বুঝি। নীতি আরো বলে, আমি ইকনোমিক্সে এমএ পাস। এখন ভাবি পলিটিকাল সাইন্স নিয়ে পড়লে  ভালো হতো। রিফাত আজ অফিস ফাকি দিলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচটা ঘরে বসে হাতপা ছড়িয়ে চা আর চিপ্স খেতে খেতে দেখবে বলে। এখন বুঝলো, সে গুড়ে বালি। গুড়ে বালি পড়লে সে বালি বেছে আলাদাও করা সম্ভব হয় না আর গুড়ও খাওয়া হয়ে ওঠে না। সেই অসাধ্য সাধনের উদ্দেশ্য নিয়ে রিফাত বললো, আমাকে এককাপ চা বানিয়ে দাও না সোনা। -দাড়াও, ব্রেকটা হোক বানিয়ে দেবো।